জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
মানুষের নিজের ও সমাজের কল্যাণ এবং মুক্তিসাধনে জ্ঞানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশ যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়, বুদ্ধির বিকাশও সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে মুক্তির পথও রুদ্ধ হয়ে যায় । সভ্যতার অভাবনীয় উন্নতির পেছনে রয়েছে মানুষের জ্ঞান-জিজ্ঞাসা। জগৎ ও জীবনের রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই মানুষ উত্তরোত্তর আবিষ্কার করে চলেছে নতুন নতুন জিনিস, উৎপাদন করছে নতুন নতুন কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য। আর এসব পণ্যের উপযোগিতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের ও সমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে জ্ঞানকে পুঁজি করে দেশে দেশে, কালে কালে মানুষ শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। আর শিল্প- সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ও ভালোলাগা, ভালোবাসার রহস্য উদ্ঘাটনে নিয়োজিত থাকছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের দুঃখ-কষ্ট প্রশমনের মানুষের আত্মিক কল্যাণ সাধিত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি মানুষ জীবন-বাস্তবতাকে সহজে মেনে নিতে পারছে।
পৃথিবী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে নানারকম অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস এবং ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। আর যে সমাজে জ্ঞান সীমাবদ্ধ অর্থাৎ জ্ঞান বিকাশের সুযোগ নেই, সেখানে বুদ্ধিও আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে সে সমাজের মানুষকে অন্ধকারেই দিনাতিপাত করতে হয়; মুক্তির স্বাদ লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতেও অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে, ডায়রিয়া হলো ওলাবিবি নামক দৈত্যের কুদৃষ্টির ফল; অনেক সমাজের মানুষ মনে করে শুভ দিন-ক্ষণ না দেখে কাজে না নামলে শতচেষ্টার পরও সে কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। আবার অনেক রক্ষণশীল পরিবারের লোকেরা মনে করে, মেয়েদের স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষালাভ করা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থি। কিন্তু এগুলো বুদ্ধির দ্বারা সমর্থিত কি না, তা মানুষ যাচাই করে দেখে না ।
প্রত্যক্ষণ ও যাচাই ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জন করা উচিত নয়। যে সমাজের মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই না করে কেবল অন্ধবিশ্বাস ও অযৌক্তিক ধারণার ভিত্তিতে গ্রহণ কিংবা বর্জন করে, সে সমাজের মানুষের পক্ষে বুদ্ধির বিকাশসাধন কিংবা মুক্তির স্বাদগ্রহণ— কোনোটিই সম্ভব নয় ।